ফকিরহাট প্রতিনিধি. বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধীক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত দশ দিনে জটিলতা নিয়ে ২৫ জন রোগী ডেঙ্গু জ¦র নিয়ে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছেন এক নারী এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। প্রতিদিন আসছে নতুন রোগী। অথচ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত টেস্টের ব্যবস্থা।
সোমবার দুপুরে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী ধারণ ক্ষমতা না থাকায় কেবিন ও সাধারণ রোগীদের সাথেও ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। জ্বর ও ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে নারী পুরুষ সহ বিভিন্ন বয়সী রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন হাসপাতালে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। অনেকে আবার পার্শবর্তী বাগেরহাট ও খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ সুকুমার ভট্টাচার্য্য জানান, গত ১৫ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউট ডোরে ৫ হাজার ৬২০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যাথা সহ ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসেন। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর টেস্টে অনিহা থাকার কারণে প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নির্ণয় করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। রোগীরা টেস্ট করলে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতো বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সাবেক আরএমও ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আউট ডোরে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী জ¦র ও গায়ে ব্যাথাসহ ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে আসেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র জটিল ও মারাত্মক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত প্লাটিলেট চেক করার। কোন জটিলতা তৈরি হলে দ্রæত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্তের সাধারণ পরীক্ষা করা ছাড়া ডেঙ্গুর প্লাটিলেট কাউন্টসহ অন্যান্য টেস্টের কোন ব্যবস্থা নেই এ সরকারি হাসপাতালটিতে। রোগীদের সবসময় বেসরকারি ক্লিনিক থেকে টেস্ট করে আনতে হচ্ছে। ফলে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে রোগীদের।
হাসপাতালে ভর্তি বেল্লাল হোসেন, সালমা বেগম, শেখ আজিজুলসহ কয়েকজন রোগী জানান, তাদের পরিবারের প্রায় সবাই জ্বরে আক্রান্ত। তবে তাদের শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ায় পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসি মালিকরা জানান, নাপা, প্যারাসিটামল ও ডেঙ্গুর রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত স্যালাইন জাতীয় ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জমান সাগর বলেন, “সেপ্টেম্বরে এসে ফকিরহাটে ডেঙ্গুজ¦রের সংক্রমণ বেড়েছে। ভর্তি রোগীদের জন্য অষুধ রয়েছে এবং যথাসাধ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনসচেতনার মাধ্যমে সামাজিক প্রতিরোধ ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায়।”