বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
পিআর পদ্বতিসহ ৫ দফা দাবীতে বাগেরহাটে তিন ইসলামী দলের পৃথক বিক্ষোভ কর্মসুচি ১৭ বছর পর বাগেরহাটে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন রামপালে মহিলাদের কর্মসংস্থানে কাজ করা হচ্ছে উঠান বৈঠকে -ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ধর্মীয় সম্প্রীতির উৎসবে হিন্দু-মুসলিমের মিলন মেলা বাগেরহাটে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা বাগেরহাটে ডেঙ্গুতে যুবকের মৃত্যু ফকিরহাটে পানিতে ডুবে আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু ফকিরহাটে ইঁদুর দমন মাসব্যাপি বিশেষ অভিযানে নেমেছে কৃষি বিভাগ চীনে নদী সম্মেলনে যাচ্ছেন বাগেরহাটের পরিবেশযোদ্ধা নূর আলম দস্যু আতঙ্ক নিয়ে দুবলার চরে শুঁটকি পল্লীতে যাচ্ছে জেলেরা

মোংলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশের বিরুদ্বে দুর্নীতির অভিযোগ

রিপোর্টার- / ২৩ পড়া হয়েছে
সময়- মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক. মোংলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশের বিরুদ্ধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশ মোংলায় যোগদানের পর থেকেই গত দুই বছর সময় ধরে উপজেলা চত্তরে অফিস না করে কৌশলে মোংলা পোর্ট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার ছাত্র/ছাত্রীদের ক্লাশ রুম দখল করে অফিস তৈরী করেছেন। সেখানে বসে বদলী বানিজ্যসহ নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি করে আসছেন। অভিযোগ আছে তিনি অফিসে আসেন ইচ্ছে খুসিমত। কখনও সকাল ১১টার পর আবার কখনও আসেনই না। আবার আফিসে আসলেও কয়েকজন নিজস্ব শিক্ষক নিয়ে খোস গল্পে মেতে থাককেন। তবে সঠিক সময় অফিসে আসা এবং নিয়ম মেনে অফিস করা হচ্ছে বলে দাবী শিক্ষা কর্মকর্তার পিন্টু রঞ্জন দাশ’র। শুধু এই কয়টি অনিয়মই নয়, বদলি, পদায়ন ও তদন্তের নামে নানা কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশ’র বিরুদ্ধে। এ ছাড়া রয়েছে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাগেরহাটের একজন সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশ। সেই সুযোগে কয়েকজন শিক্ষক, দুই জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীকে নিয়ে মোংলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অনিয়ম আর দুর্নীতির আকড়ায় পরিনত করেছেন তিনি। তার এ অনিয়ম-দুর্নীতি আর অর্থ আদায়ের বিষয়টি শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রকাশ পেলে সমালোচনার ঝড় উঠে। তিনি সরাসরী এ সকল অর্থ আদায়ের সাথে না জড়িয়ে অফিস সহকারী এমরান হোসেন, দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পুস্পজিৎ মন্ডল ও গুরুদাশ বিশ্বাসকে দিয়ে বেশীরভাগ সময় এ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। তাদের এমন ঘটনা নিয়ে দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে জড়িয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন অভিভাবকসহ ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। এ বিষয় বেশ কয়েক বার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তদন্ত ও করেছেন তাদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। তদন্তে সত্যতা প্রমানিত হলে প্রথমে পুস্পজিৎ মন্ডল, পরে গুরুদাশ বিশ্বাসকে জরুরী ভিক্তিতে মোংলা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে অন্যাত্র বদলী করা হয়। কিন্ত বড় দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
গত বছরের ৫ আগষ্ট বহু আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলেও আ’লীগের প্রিষ্ঠপোষক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশের অনিয়ম-দুর্নীতি আর অর্থ আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। অবৈধ উপার্জনে তার এলাকায় নিজে তৈরী করেছেন পাকা বাড়ি। হয়েছেন দামী গাড়ির মালিকও। দুর্নীতিবাজ দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বদলী হলেও দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই তার দপ্তরের প্রধান অফিস সহকারী এমরান হোসেন। শিক্ষা কর্মকর্তার এ অপকর্মের সহায়তা করছে কয়েকজন শিক্ষক ও বর্তমান শিক্ষক সমিতির নামধারী সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন/সাধারন সাইদুর রহমান।
পিন্টু রঞ্জন দাস মোংলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদে মোংলায় যোগদান করেন ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। মোংলা উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের বদলি, সংযুক্তি, প্রতিস্থাপন  ও  ‘বদলী বাণিজ্য’ শুরু করেন শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশ। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের বিদ্যালয়ের দূরত্ব ও অবস্থান অনুযায়ী বদলিতে শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি ৩০ হাজার থেকেত ৫০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেন।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে ২০২২ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে শিক্ষকদের ডেপুটেশন (সংযুক্তি) আদেশ বাতিল করলেও পিন্টু রঞ্জন দাশ ওই আদেশের তোয়াক্কা না করে নিজেই এক অফিস আদেশে টাকা খেয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ডেপুটেশনের নামে এক স্কুল থেকে পছন্দের স্কুলে বদলী করছে তিনি। তার এ অনিয়মের ব্যাপারে কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে অফিসে ডেকে এনে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে বদলী বাতিল হওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ আদায় করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মোংলা সাহেবের মেঠ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা শফিকুল ইসলাম বলেন, তার স্কুলে নুরুন্নাহার নামের এক শিক্ষিকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন কিন্ত মোল্লা শফিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে গেলে শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জনের পরামর্শে তাকে যোগদান করতে দেননি নুরুন্নাহার। পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময় সেখানে যোগদান করতে হয়েছে। আরো টাকার জন্য এখনও শিক্ষা কর্মকর্তার চাপের মধ্যে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক মোল্লা শফিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, বেকায়দায় ফেলে টাকা আদায় করা শিক্ষা কর্মকর্তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। টাকা দিলেই সব দোষ নির্দোষ হয়ে যায়, আর না দিলে সেই শিক্ষককে এমন স্কুলে বদলী করে সেখান থেকে আসা-যাওয়াই দিন পার হয়ে যায়। দৈনিক খরচ হয়ে যায় ১/২ শত টাকা। বর্তমানে অনলাইনে বদলীর অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ২০/২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তার এ অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
পোর্ট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ সংঙ্কর বাওয়ালী বলেন, আমার স্কুল পৌর শহরের মধ্যে। সেখানে অনেক ছাত্র/ছাত্রী সামাল দিতে হয়। কিন্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার পুরোটাই দখলে নিয়ে অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাচ্ছেন। উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন তৈরী হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস স্থানান্তরিত করার জন্য তাগিদ দিলেও কৌশলে সেখানে না এসে ছাত্র/ছাত্রীদের ক্লাস রুম দখল করে তার দুর্নীতি আর অর্থ আদায়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষক মো. ফারুক নিজেকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি দাবি করে বলেন, শিক্ষকদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে যেতে হয়। অনেকে বিষয়টি নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপবাদ ছড়াচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষক নেতা ও শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে, এরা আমার বিরুদ্ধে অহেতুক কথা ছড়াচ্ছে। আর অনলাইন বদলিতে আবেদন করতে হয় অনলাইনে, সফটওয়ারের মাধ্যমে সব কাজ করা হয়, এখানে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমার কোনো হাত নেই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা নাসরিন আক্তার বলেন, অভিযোগ এখনও হাতে পৌছায়নি, তবে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের হয়রানি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ