বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
পিআর পদ্বতিসহ ৫ দফা দাবীতে বাগেরহাটে তিন ইসলামী দলের পৃথক বিক্ষোভ কর্মসুচি ১৭ বছর পর বাগেরহাটে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন রামপালে মহিলাদের কর্মসংস্থানে কাজ করা হচ্ছে উঠান বৈঠকে -ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ধর্মীয় সম্প্রীতির উৎসবে হিন্দু-মুসলিমের মিলন মেলা বাগেরহাটে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা বাগেরহাটে ডেঙ্গুতে যুবকের মৃত্যু ফকিরহাটে পানিতে ডুবে আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু ফকিরহাটে ইঁদুর দমন মাসব্যাপি বিশেষ অভিযানে নেমেছে কৃষি বিভাগ চীনে নদী সম্মেলনে যাচ্ছেন বাগেরহাটের পরিবেশযোদ্ধা নূর আলম দস্যু আতঙ্ক নিয়ে দুবলার চরে শুঁটকি পল্লীতে যাচ্ছে জেলেরা

সাগরে অবৈধ ট্রলিং : ইলিশ উৎপাদন বিপর্যয়

রিপোর্টার- / ১৭ পড়া হয়েছে
সময়- শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক. একবার সাগরে যেতে খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। কিন্তু সেই খরচের টাকাও উঠছে না। ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম চলছে।কাঙ্খিত ইলিশ পাননি বলে জানান জেলে নুর হাসান। প্রতিবারই ফিরে এসেছেন মাত্র একশ বা দুইশ ইলিশ নিয়ে। দুশ্চিতায় পড়েছে জেলেরা।
তিনি বলেন, “গত ৪-৫ বছর আগেও আমরা যখন সাগরে ইলিশ শিকারে যেতাম, তখন ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ইলিশে ট্রলার ভর্তি হয়ে যেত। ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে প্রায় ৩ থেকে ৬ হাজার ইলিশ নিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলে আসতাম। এটাকে ইলিশের বাম্পার উৎপাদন বলতাম। কিন্তু গত ২-৩ বছর ধরে দেখছি সাগরে ইলিশের উৎপাদন কমছে। এখন ১৪-১৫দিন সাগরে জাল ফেলেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। সরকারি এতো নিষেধাজ্ঞার পরও কেন ইলিশ মিলছে না, এটা খুবই চিন্তার বিষয়।”
গভীর সাগরে গিয়েও মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ।
আবু তৈয়ব মাঝি বলেন, “এবারের মতো এমন কম মাছ আগে দেখিনি। গত ৩ বছর ধরে মাছের গতি ভালো না। বড় মাছ পেতে অনেক দূরে সাগরে যায়। কিন্তু বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।” ৫-৬ বছর আগের কথা মনে করে তিনি বলেন, “তখন ট্রলার ভর্তি ইলিশ আনতাম। সেই ইলিশ সেই সময়েই ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হতো। তখন ট্রলার মালিকও খুশি থাকত, আমরাও থাকতাম।”তৈয়ব মাঝির মতো আরও অনেক জেলের কাছে সবকিছু যেন অচেনা হয়ে গেছে। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেকেই এখন ট্রলার সাগরে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, সাগরে বেড়েছে শত শত অবৈধ ট্রলিংয়ের দৌরাত্ম। যার কারণে সাগরে কমে যাচ্ছে ইলিশের উৎপাদন।শহরের মাঝির ঘাট এলাকার ট্রলার এফবি আবসারের মাঝি আব্দুল কাইয়ুম (৫২) বলেন, “সাগরে ইলিশ শিকারে গিয়ে ১৪-১৫ দিন জাল ফেলেও মাছ পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, সাগরে ইলিশ নেই। এটা জন্য অবৈধ ট্রলিং বোটগুলোই দায়ী। কারণ তারা যেভাবে মাছ শিকার করছে এতে মাছের পোনা থেকে ধরে সবকিছু শেষ করে ফেলছে।”কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সমবায় সমিতি সদস্য আজাদুর রহমান বলেন, “স্টীল বডির ট্রলিংগুলোর দেখাদেখি এখন কাঠের তৈরি ট্রলারগুলো টলিংয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব অবৈধ ট্রলিংগুলো সাগরের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে ফেলছে। ট্রলিংয়ের জালে মাছের পোনাগুলো ঠিকতে পারছে না, ডিমের রেনুগুলো মারা যাচ্ছে। আর ছোট ছোট মাছগুলো তারা আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। যেভাবে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে না তাতে মনে হচ্ছে, সাগরের মৎস্য সম্পদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।”

তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ অবতরণ হয়েছে ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ অবতরণ হয়েছে ২,৫৫৬ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অবতরণ হয়েছে ১,৬২৮ মেট্রিক টন ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগস্ট পর্যন্ত অবতরণ হয়েছে ২৬৭ মেট্রিক টন ইলিশ। এখন ইলিশ যেন স্বর্ণের মতো এক সময় কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ৩টি পল্টুনে জায়গা না পেয়ে ইলিশ রাখা হতো খোলা মাঠেও। এখন সেই পল্টুনে দেখা মিলছে মাত্র ৪-৫শ ইলিশ। সেগুলোর দেখা পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষায়, এখন ইলিশ যেন স্বর্ণের মতো, দামও সেই রকমই চড়া।


কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী আব্দু রহিম বলেন, “আগে ৩-৪টা পল্টুন ইলিশে সয়লাব হয়ে যেত। আর পল্টুনে ইলিশ রাখার স্থান পেয়ে মসজিদের খোলা মাঠে ইলিশ রেখে ব্যবসা করতাম। কিন্তু বতর্মানে এবছরে কক্সবাজারের অবস্থা ভাল না, ইলিশ নেই বললেই চলে। এক-দুইশ ট্রলার সাগরে গেলে ইলিশ নিয়ে আসে মাত্র ৪ থেকে ৫টা ট্রলারে। তাও ইলিশ পায় ২’শ থেকে ৫’শ মতো। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
”আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, “পুরো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে দেখা যায় মাত্র ৪ থেকে ৫’শ ইলিশ। এগুলো নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা ঘিরে ধরে। আর এসব ইলিশের দাম আকাশ চুম্বী।
”মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সাগরে দুর্যোগও বেশি, ট্রলিং বোটও বেড়ে গেছে। এখন ইলিশটা স্বর্ণের মতো হয়ে গেছে। এক কেজি ইলিশের দাম এখন ২ হাজার ৫০০ টাকার বেশি।
”কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী বলেন, চলতি বছর ইলিশ অবতরণ হয়েছে মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। প্রতিবছরই ইলিশ অবতরণের পরিমাণ কমছে। যার কারণে রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে।একসময় ইলিশ ছিল বাংলাদেশের সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির প্রাণ। এখন সেই ইলিশই সংকটে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি, অবৈধ ট্রলিং ও পোনা নিধনের কারণে সাগরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ