নিজস্ব প্রতিবেদক. ১৯৮৫ থেকে ২০২৫ চার দশক ধরে উপকূলবাসীর জীবনে ঘূর্ণিঝড় মানেই আতঙ্কতবে সুপার সাইক্লোন সিডর (১৫ নভেম্বর ২০০৭) যেন রেখে গেছে এমন এক ক্ষত, যা ১৮ বছর পার হলেও শুকোয়নি। মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি সেদিনের ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস, হাজারো প্রাণহানি আর সবকিছু ভাসিয়ে নেওয়া ভয়ংকর দৃশ্য।এই স্মৃতির ওপর নতুন করে যোগ হয়েছে বেরিবাঁধ ভাঙন আতঙ্ক। বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জের উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত টেকসই বেরিবাঁধে (সিআইপি প্রকল্প) হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল, ধস আর ব্লক সরে যাওয়া। অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে বলেশ্বর নদীর ভাঙনে যেকোনো সময় বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।সরেজমিনে শরণখোলার বগী, গাবতলা, দক্ষিণখালী এবং মোরেলগঞ্জের আমতলা, ফাসিয়াতলা এলাকায় দেখা গেছে বাঁধের বিভিন্ন অংশে লম্বা ফাটল, কোথাও আবার ব্লক সরে নদীতে পড়ে যাচ্ছে। যে বাঁধটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন ,সম্পদ বাঁচানোর কথা, সেটিই এখন নতুন আতঙ্কের নাম।বগীর জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, সিডরের রাত এখনো ভুলতে পারি না। আবার যখন শুনি বাঁধে ফাটল ধরেছে, তখন রাতেও ঘুম হয় না। এ বাঁধটা টিকে না থাকলে আমাদের গ্রামের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সাউথখালীর গৃহবধূ মাসুমা বেগম বলেন, আমরা তখনই বলেছিলাম এত বালুর বস্তা দিয়ে কাজ টিকবে না। এখন ঠিকই দেখা যাচ্ছে বাঁধ দুর্বল। ভয় লাগছে আবার সব ভেসে যাবে। মোরেলগঞ্জের যুবক সাইফুল হাওলাদার বলেন, হস্তান্তরের আগেই ফাটল! বর্ষায় তো ভয়াবহ অবস্থা হবে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপর্যয় নিশ্চিত।বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন ,আমরা দ্রুত ভাঙনকবলিত স্থানগুলো পরিদর্শন করেছি। কোথায় কী সমস্যা হয়েছে তা শনাক্ত করা হচ্ছে। নদী শাসন, শক্তিশালী ব্লক বসানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা কাজ করছি।” তবে স্থানীয়রা বলছেন শুধু আশ্বাসে নয়, মাঠে দৃশ্যমান কাজই এখন জরুরি। ২০০৭ সালের সিডর শুধু বাগেরহাটেই কেড়ে নেয় ৯০৮ জনের প্রাণ। শরণখোলামোরেলগঞ্জে তছনছ হয়ে যায় দেড় লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি, রাস্তা, বাঁধ ও ফসলসেই সময় থেকে উপকূলবাসীর একমাত্র দাবি একটি শক্তিশালী, টেকসই বেরিবাঁধ১৮ বছর পর সেই দাবি পূরণ হলেও এখন আবার সেই বাঁধই ভাঙনের মুখে।